সাত দিনের দীর্ঘ লুকোচুরি এবং টানটান উত্তেজনার পর অবশেষে বাঁকুড়ার জঙ্গলে ধরা পড়ল ওড়িশা থেকে আসা বাঘিনি ‘জ়িনত’। রবিবার বিকেলে বন দফতরের ঘুমপাড়ানি গুলির সাহায্যে তাকে কাবু করা হয়। গত শনিবার থেকে জ়িনতকে ঘিরে চলছিল বন দফতরের নিরন্তর প্রচেষ্টা। পুরুলিয়ার জঙ্গল ছেড়ে সে আশ্রয় নিয়েছিল বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থানার গোঁসাইডিহি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে। তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর বনকর্মীরা ঘুমপাড়ানি গুলি ব্যবহার করে তাকে ধরার চেষ্টা করেন। তবে প্রথম দফার প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
গভীর রাতে বাঘিনি আবারও লুকিয়ে পড়ে গভীর জঙ্গলে। রবিবার বিকেলে ফের ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়, যা সঠিকভাবে আঘাত হানে বাঘিনির শরীরে। গুলি লাগার পর জ়িনত দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বনকর্মীরা সফলভাবে তাকে খাঁচাবন্দি করতে সক্ষম হন। ১৫ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে তিন বছরের বাঘিনি জ়িনতকে নিয়ে আসা হয়েছিল ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে। পর্যবেক্ষণের পর ২৪ নভেম্বর রেডিয়ো কলার পরিয়ে তাকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পর জ়িনত ঝাড়খণ্ডের দিকে রওনা দেয়। ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জঙ্গল পেরিয়ে সে প্রবেশ করে পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রামের কাটুচুয়া জঙ্গলে এবং সেখান থেকে পুরুলিয়ার জঙ্গলে। শেষ পর্যন্ত সে পৌঁছে যায় বাঁকুড়ার গোঁসাইডিহি গ্রামে।
বাঘিনির গর্জন ও পায়ের ছাপ দেখে গ্রামবাসীরা নিশ্চিত হন যে জ়িনত খুব কাছেই রয়েছে। বনকর্মীরা রেডিয়ো কলারের মাধ্যমে তার অবস্থান ট্র্যাক করেন এবং গোটা এলাকা ঘিরে ফেলেন। নাইলন দড়ি দিয়ে জঙ্গল ঘিরে দেওয়া হয় এবং গ্রামবাসীদের সুরক্ষায় রাস্তাগুলোকেও জাল দিয়ে আটকানো হয়। বাঘিনিকে আকর্ষণ করতে দু’টি মহিষকে টোপ হিসেবে রাখা হয়। অবশেষে, সঠিক পরিকল্পনা এবং ধৈর্যের ফলস্বরূপ বন দফতর বাঘিনি জ়িনতকে নিরাপদে ধরতে সক্ষম হয়। এই ঘটনার মাধ্যমে বন দফতরের সাফল্য এবং বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে তাদের অঙ্গীকার আরও একবার প্রমাণিত হল।